বিএনপির পালে খালেদা-তারেক জিয়ার মামলা মুক্তির হাওয়া
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থেকে একের পর এক মুক্তির খবর এসেছে, যা দলটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আশা সৃষ্টি করেছে। গত বুধবার এক দিনে দুটি মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট তার আপিল মঞ্জুর করেছে, যার ফলে তিনি খালাস পেয়েছেন। ২০১৮ সালে বিশেষ আদালত এই মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন এবং বুধবার হাইকোর্ট তার খালাসের রায় দেয়।
অন্যদিকে, খালেদা জিয়া বুধবারই বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায়ও খালাস পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এই মামলায় অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে খালাস দেন। তবে, মামলার চার্জশিটভুক্ত অপর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ মামলায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসানসহ বেশ কয়েকজন আসামি রয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও একই দিনে দুটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছে। বিশেষ জজ আদালত ১০-এর বিচারক মো. রেজাউল করিম এই রায় দেন।
এছাড়া, গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতা অভিযোগে দায়ের করা ১১টি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেন। এ রায়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ১১টি মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলায় এ খালাস বা অব্যাহতি বিএনপির ভবিষ্যত রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে? বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্বস্তি থাকলেও তারা এখনও নিশ্চিত নন সব মামলা নিষ্পত্তি হতে কত সময় লাগবে। তবে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, "মামলাগুলোর বিরুদ্ধে আমরা আইনগতভাবে লড়াই করছি এবং বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা কোনো সরকারের সহানুভূতি আশা করি না, ন্যায় বিচারই আমাদের লক্ষ্য।" তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভবিষ্যত রাজনীতি ও নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত দেশের মানুষই নেবে এবং মামলাগুলোর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মামলার প্রক্রিয়া রাজনীতিতে নেতাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যখন তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, "রাজনীতিতে নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা অনেক সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং তা জনপ্রিয়তাকে বৃদ্ধি করতে পারে।"
অন্যদিকে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা থেকে মুক্তি পেতে, তাদের মধ্যে সরকারের আস্থার সম্পর্ক উন্নত হতে পারে। তিনি বলেন, "যেহেতু জনগণ মনে করে এসব মামলা রাজনৈতিক হয়রানি ছিল, তাদের মুক্তি বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আনন্দ সৃষ্টি করেছে। এতে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরও ভালো হতে পারে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে।"
এখন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা একযোগভাবে অপেক্ষা করছেন তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটির জন্য, যাতে দলের ভবিষ্যত নেতৃত্ব ও রাজনীতির ক্ষেত্র আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
1 Comments
অভিনন্দন!!! সত্যের জয় হবেই হবে ইনশাআল্লাহ!
ReplyDelete