জাপানে জন্মহার বাড়াতে সপ্তাহে তিন দিন ছুটির পরিকল্পনা
জাপানে জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দেশটির সরকার সরকারি কর্মচারীদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। আগামী এপ্রিল থেকে এই নীতি কার্যকর হবে, যার আওতায় কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ছুটি পাবেন।
এছাড়া, একটি নতুন নীতির আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পিতা-মাতাদের জন্যও সুবিধা দেওয়া হবে, যাতে তারা আংশিক বেতন কাটছাঁটের মাধ্যমে দ্রুত অফিস ত্যাগ করতে পারেন।
এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো কর্মজীবী মায়েদের সহায়তা এবং জাপানের রেকর্ড-নিম্ন জন্মহার বৃদ্ধির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে এক নীতিনির্ধারণী বক্তৃতায় বলেছেন, “আমরা কাজের ধরন পর্যালোচনা করবো এবং এমন ব্যবস্থা নেবো যাতে কেউ তাদের ক্যারিয়ার ত্যাগ করতে বাধ্য না হন।” তিনি আরও বলেন, “সন্তান প্রসব বা যত্ন নেওয়ার কারণে কাজ ছেড়ে যাওয়ার প্রয়োজন যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটিতে মাত্র ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা প্রজনন হারকে ১ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তবে, জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন ২ দশমিক ১ শতাংশ। এই সংকট মোকাবিলা করতে জাপান সরকার পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং অন্যান্য সহায়ক উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
তবে, সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় জন্মহারের নিম্নগতি বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘ অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, যা ‘কারোশি’ নামে পরিচিত (অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে মৃত্যু), জাপানের কর্পোরেট সংস্কৃতির একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, নারীদের জন্য ক্যারিয়ার এবং পরিবারের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ ওভারটাইম কাজের সংস্কৃতি তাদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, জাপানে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও রয়েছে, যেখানে গত বছর দেশের শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ৫৫ শতাংশ, তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ছিল ৭২ শতাংশ।
পশ্চিমা দেশগুলোতে চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে আগ্রহ বাড়লেও, জাপানে এটি এখনো একটি নতুন ধারণা। তবে কিছু গবেষণা বলছে, এই নীতি কর্মীদের উৎপাদনশীলতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
1 Comments
নতুন তথ্য পেলাম তবে কর্মজীবী মায়েদের জন্য সুখবর!!!!
ReplyDelete