ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা: নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় সরকার!



বাংলাদেশের নাগরিকরা যাতে কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া কেমন হবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে এই কথা বলেন ড. ইউনূস। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফ’র বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে, ড. ইউনূস বাংলাদেশের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, গত বছর বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করতে ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি আঁকেন।

তিনি আরও জানান, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ এখনও হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জনগণের পছন্দ জানার আগে সরকার কোনো ধরনের নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘‘সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কি ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।’’

তিনি আরও জানান, ‘‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি জনগণ দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চায়, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’’

বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘এই প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।’’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি তরুণ নয়, বরং সারাবিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘এই প্রজন্ম পুরনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না, তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।’’

ড. ইউনূস আরও জানান, তরুণদের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।

অধ্যাপক ইউনূস তার সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে বলেও জানান। ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গতি ফিরে এসেছে।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের বক্তব্যে মুগ্ধ হন ক্লাউস শোয়াব এবং আধা ঘণ্টার আলাপচারিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।