রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: অনিয়ম, দুর্নীতি এবং কারিগরি ত্রুটি!
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু থেকেই নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ থেকে শুরু করে এর পরিচালনা পর্যন্ত অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার, পরিচালনায় ভারতের আধিপত্য, এবং ঘন ঘন উৎপাদন বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যাগুলি বারবার উঠে এসেছে।
নিম্নমানের যন্ত্রপাতির কারণে ঘন ঘন ত্রুটি
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যাত্রা শুরুর পর থেকেই কারিগরি ত্রুটির মুখোমুখি হচ্ছে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ত্রুটিগুলোর মধ্যে রয়েছে টার্বাইনের সমস্যা, বয়লার টিউব ফেটে যাওয়া, হাই প্রেসার স্টিম লিকেজ, এবং কুলিং হিটারে ছিদ্র ধরা। এমনকি এসব ত্রুটি মেরামতে যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে, সেটিও ভারতের মালিকানাধীন, যার ফলে মেরামতে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
ভারতীয় আধিপত্য এবং সমান মালিকানার বৈষম্য
যদিও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশ এবং ভারতের সমান মালিকানায় পরিচালিত, প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রটির উচ্চ পর্যায়ের সবকিছুতেই ভারতের প্রভাব বেশি। কেন্দ্রটি পরিচালনায় কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতে ভারতের আধিপত্য স্পষ্ট। এর ফলে বাংলাদেশকে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া, কারিগরি ত্রুটির কারণে ঘন ঘন উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশকে কেন্দ্রভাড়া ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা আর্থিকভাবে দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রয়োজন না থাকলেও নির্মাণ
পাওয়ার সেলের সাবেক ডিজি বিডি রহমত উল্লাহ বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ছিল। যখন এই প্রকল্প শুরু করা হয়, তখনও দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য এ কেন্দ্রটির প্রয়োজন ছিল না। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি, ফলে এই কেন্দ্রটি এখন একেবারেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, সুন্দরবনের পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কাও এ কেন্দ্রটির সাথে যুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের শুরু থেকেই লুকোচুরি এবং ভুল তথ্য
প্রকল্পের শুরু থেকেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নানা লুকোচুরি এবং ভুল তথ্যের অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছিল যে এখানে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে, কিন্তু পরে জানা যায় সেখানে শুধুমাত্র সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তিগত পার্থক্যের কারণে কয়লা থেকে উৎপন্ন দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, কেন্দ্রটির প্রকৃত তথ্য পাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কঠিন, কারণ এর ওয়েবসাইটও অত্যন্ত জটিল এবং এতে প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে পাওয়া যায় না।
সমাপ্তি চিন্তা
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারছে না, বরং এর নিম্নমানের যন্ত্রপাতি, পরিচালনায় অনিয়ম, এবং অতিরিক্ত খরচের কারণে এটি দেশের আর্থিক এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করার আগে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক দিকগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।
0 Comments