ভিয়েতনামের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য
বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, যা সরাসরি সম্পর্কিত ভিয়েতনামের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) কার্যকরের ফলে। বাংলাদেশে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ইইউ বাজার থেকে, যেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশ হিসেবে ভিয়েতনাম সামনে এসেছে।
২০১৯ সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউর এফটিএ চুক্তি আংশিক কার্যকর হওয়ায়, ভিয়েতনাম বর্তমানে শুল্কমুক্ত সুবিধায় তাদের ৭১ শতাংশ পণ্য ইইউতে রপ্তানি করছে। এর ফলস্বরূপ, ভিয়েতনামের রপ্তানি বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি কিছুটা কমছে। ২০২৭ সালে এই চুক্তি শতভাগ কার্যকর হবে, তখন ভিয়েতনাম শুল্কমুক্ত সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করবে। আর বাংলাদেশ, ২০২৬ সালে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের পর, শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারাবে এবং তার পণ্যগুলোর উপর ৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে।
এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তখন বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যে শুল্কারোপ হবে ভিয়েতনামের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, ভিয়েতনাম ইইউতে রপ্তানি করতে পারবে শুল্কমুক্ত, কিন্তু বাংলাদেশকে প্রতি পণ্যতে ৯ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে পারে, যা বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত।
বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী ৩ বছর—যতক্ষণ না এটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে—শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তবে, ২০২৯ সালের পর ইইউতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হ্রাস পেতে পারে, বিশেষ করে যদি বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল হয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) আশঙ্কা করছে, ইইউ এবং অন্যান্য বাজার মিলিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৪.৩ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করেছিল জার্মানির অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক ইবার্ট স্ট্রিপটাং (ফিইএস) এবং র্যাপিড। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকি।
বিশ্লেষকরা বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে এফটিএ চুক্তির ফলে ইইউতে পোশাক খাতে বাংলাদেশের আধিপত্য কমে যেতে পারে, কারণ এখনো পোশাকের উপর শুল্কমুক্ত সুবিধা রয়েছে। গত বছর ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ২১.৭ শতাংশ, তবে ভিয়েতনামের পোশাক এখনও শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়নি।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ভিয়েতনাম শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে বাংলাদেশ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে এবং তার রপ্তানি বজায় রাখবে।
1 Comments
এটা এখন দেখার বিষয়!!!!
ReplyDelete